কুষ্ঠ রোগ কি ?

মাইকোব্যাক্টেরিয়াম লেপ্রি (Mycobacterium leprae) নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে কুষ্ঠ রোগ হয়। মাইকোব্যাক্টেরিয়াম লেপ্রি ব্যাকটেরিয়াটি খুব ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং এদের দ্বিগুন হতে প্রায় এক সপ্তাহ সময় লাগে।

কুষ্ঠ রোগ কোথায় হয় ?

কুষ্ঠ রোগ সাধারণত ত্বক,চোখ,নাকের মিউকাস মেমব্রেন,মস্তিস্ক,মেরুদণ্ডের বাইরের দিকের স্নায়ু এবং অন্ডকোষের ক্ষতি করে।

কিভাবে কুষ্ঠ রোগ হয়

 

  • নিঃশ্বাসের সাথে এ রোগ হতে পারে।
  • আক্রান্ত ব্যাক্তির নাক মুখ দিয়ে ঝরা সর্দির মাধমে।
  • কুষ্ঠ রোগীর সংপর্শের মাধমে এ রোগ ছড়াতে পারে। তবে সাধারণত স্পর্শের  মাধ্যমে এটি ছড়ায় না
  • আক্রান্ত বেক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ এবং দীর্ঘ সময় ধরে মেলামেশার ফলে এ রোগ হতে পারে। অল্প বা সামান্য মেলামেশায় সাধারণত এ রোগটি ছড়ায়না।
  • অনেক ক্ষেত্রে জীবাণু দ্বারা সংক্ৰমিত হলেও কোষ্ঠ রোগ হয় না।
  • জিনগত কারণ অনেক ক্ষেত্রে সংক্ৰমনের জন্য দায়ী হতে পারে। এ সমস্ত রোগীর ক্ষেত্রে জীবাণু দ্বারা সংক্ৰমিত হলে তাদের এ রোগটি হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

কুষ্ঠ রোগ কত প্রকার ও কি কি ?

উপসর্গের উপর ভিত্তি করে কুষ্ঠ রোগ সাধারণত তিন রকম হতে পারে। সেগুলো হলো –
  • টিউবারকিউলয়েড (Tuberculoid)  leprosy
  • লেপ্রোমেটাস (Lepromatous) leprosy এবং
  • বর্ডারলাইন (Borderline) leprosy.
অথবা আক্রান্ত অবস্থার উপর নির্ভর করে কুষ্ঠ রোগ দুই রকম হতে পারে। তা হলো-
  • পসিব্যাসিলারি (Paucibacillary)
  • মাল্টিব্যাসিলারি (Multibacillary).
ত্বকের পাঁচ বা কম জায়গা আক্রান্ত হলে সেটা পসিব্যাসিলারি। আর যদি ছয় বা ছয়ের বেশি জায়গা আক্রান্ত হলে সেটা মাল্টিব্যাসিলারি।

কুষ্ঠ রোগের প্রধান লক্ষণ কি ?

কুষ্ঠ সংক্রমণের ৫ থেকে ৭ বছর পর সাধারণত প্রধান লক্ষণ দেখা দিতে থাকে এবং পর্যায়ক্রমে  উপসর্গ গুলো বাড়তে থাকে। কুষ্ঠ রোগ হলে সাধারণত নিম্ন লিখিত লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয় –
  • ত্বকে লালচে দাগ অথবা মসৃণ সাদাটে দাগ দেখাদেয়।
  • ত্বকের যেসব স্থান সংক্ৰমিত হয় সেসব স্থানে পিন্ড দেখা যায় বা ফুলে যায়।
  • স্পর্শ,ব্যথা এবং তাপমাত্রার অনুভূতি হ্রাস পায়।
  • নিজের (যাদের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ) অজান্তেই কোন ক্ষতি করতে পারে যেমনঃ শরীরের কোন জায়গা আগুনে পুড়ে যাওয়া, কাটা ইত্যাদি। আবার অনেক ক্ষেত্রে হাত বা পায়ের আঙ্গুল হারাতে পারে।
কুষ্ঠ রোগ কি, কারণ,লক্ষণ, প্রকার এবং প্রতিরোধ ও চিকিৎসা।
কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ
  • টিউবারকিউলয়েড কুষ্ঠের ক্ষেত্রে :ত্বক লালচে দাগের সাথে কিছু কিছু জাগায় মসৃণ সাদাটে দাগ হতে পারে এবং আক্রান্ত স্থান অসাড় হয়ে যায়।
  • লেপ্রোমেটাস কুষ্ঠের ক্ষেত্রে : ত্বকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক পিন্ড হতে পারে কিংবা অনেক খানি স্থান জুড়ে নানান আকারের লালচে দাগ হতে পারে,মাংশপেশী দুর্বল হয়ে পরে এবং শরীরের বেশিরভাগ স্থান অসাড় হয়ে যায়। এ রোগে শরীরের বেশিরভাগ অঙ্গ এবং ত্বকের বেশিরভাগ অংশ আক্রান্ত হতে পারে।
  • বর্ডারলাইন কুষ্ঠের ক্ষেত্রে : টিউবারকিউলয়েড  leprosy ও লেপ্রোমেটাস leprosy এর প্রায় সকল লক্ষণ ই বিদ্যমান থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় এটা টিউবারকিউলয়েড  leprosy এর মত লক্ষণ দেখাযায় এবং পরবর্তী অবস্থা খারাপ হলে লেপ্রোমেটাস leprosy এর উপসর্গ দেখাদেয়।

কুষ্ঠ রোগের জটিলতা সমূহ ,

কুষ্ঠ রোগের যেসব জটিলতা আছে তা নিম্নে দেয়া হলো –

  • পায়ের নিচে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে যার ফলে হাঁটতে গেলে পায়ে ব্যথা করে।
  • নাসিকাতে ক্ষতের কারণে নাকে সমস্যা হতে পারে এবং নাক থেকে রক্তপাত হতে পারে এমনকি নাক ক্ষয়ে যেতে পারে।
  • চোখের ক্ষতির কারনে গ্লুকোমা অথবা অন্ধত্ব হতে পারে।
  • পুরুষদের লেপ্রোমেটাস leprosy হলে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে ব্যর্থ এবং সন্তান জন্ম দনে বার্থ হয়।
  • কিডনির কার্যকারিতা নষ্ট হয়।

leprosy রোগের প্রতিকার কি ?

leprosy রোগের প্রতিকার সমূহ আলোচনা করা হলো-

  • আক্রান্ত বেক্তির শরীর থেকে নিঃসৃত তরল জাতীয় পদার্থ যেমনঃ নাক-মুখ দিয়ে ঝরা সর্দির মাধমে এ রোগ চড়াতে পারে। এসবের সংস্পর্শে আসা যাবে না।
  • যদিও সাধারণ স্পর্শের মাধমে এটি ছড়ায় না তারপরেও কুষ্ঠ রোগীর স্পর্শের বেপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
  • আক্রান্ত বেক্তির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে এবং দীর্ঘ সময় ধরে মেলামেশায় কুষ্ঠের সংক্ৰমন হতে পারে। তাই আক্রান্ত বেক্তির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশার ব্যপারে সাবধান হতে হবে।
  • পরিবারের কেউ এ রোগে আক্রান্ত থাকলে জীবাণুর সংক্রমনে এ রোগ হবার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে জীবাণু সংক্রমনের বেপারে অধিক সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
  • আক্রান্ত রোগীর ত্বকের ফুসকুড়ি এবং ফুসকুড়ি থেকে নিঃসৃত পদার্থের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে।
  • বিসিজি টিকা গ্রহণের মাদ্যমে কুষ্ঠ প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসা

leprosy রোগের সংক্ৰমণ দীর্গস্থায়ী হলেও এটা অধিক সংক্ৰমক নয়। সাধারণত কুষ্ঠ রোগে মৃত্যুর হার অত্যন্ত কম। এ রোগের চিকিৎসা রোগের ধরণ, মাত্রা, রোগীর বয়স ইত্যাদি কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে।
সমস্ত বিষয় বিবেচনা করে প্রধানত দুই ভাবে চিকিৎসা করা হয়।
যেমন দীর্ঘ সময় ধরে এন্টিবায়োটিক জাতীয় ঔষধ সেবনের মাধ্যমে অথবা ড্যাপসোন দিয়ে সারা জীবন ধরে চিকিৎসা।
এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তার পরিবারকে অনেক ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার সম্মখিন হতে হয়।