ডায়রিয়া বা উদরাময় কী ?
ডায়রিয়া বা উদরাময় হল প্রতি দিন কমপক্ষে তিনবার পাতলা বা তরল মলত্যাগ করার ফলে যে রোগ হয় তাকে বোঝায়। এটা প্রায়শ কয়েক দিন স্থায়ী হয় এবং এর ফলে অতিরিক্ত তরল বেরিয়ে যাওয়ার কারণে জলশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
উদরাময় বা ডায়রিয়ার পুষ্টিক তন্ত্রের একটি রোগ যাতে মলের সাথে শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায়। ভিবিন্ন কারনে উদরাময় হতে পারে। এগুলোর মধ্যে কিছু সংক্রামক আবার কিছু সংক্রামক নয়।
ডায়রিয়ার কারণ কী কী ?
ডায়রিয়ার কারণ হিসাবে ছোট একটি তালিকা নিম্নে দেওয়া হল :
(১)ডায়রিয়া সংক্রমণে শক্তিশালী ভূমিকা রাখা ভাইরাসগুলোর মধ্যে রয়েছে
নরোভাইরাস, অ্যাস্ট্রোভাইরাস, এন্টারিক অ্যাডেনোভাইরাস, ভাইরাল হেপাটাইটিস এবং সাইটোমেগালোভাইরাস। রোটাভাইরাস বাচ্চাদের ডায়রিয়ার তীব্রতার জন্য দায়ী।
দূষিত পানি নরোভাইরাস, অ্যাস্ট্রোভাইরাস, হেপাটাইটিস এ ভাইরাস, এবং স্যাপোভাইরাসের একটি বড় উৎস। হিমায়িত সবজি হেপাটাইটিস এ ভাইরাসের বড় উৎস। নোরোভাইরাস থাকে পাতাযুক্ত সবুজ শাকসবজি এবং তাজা ফলের মধ্যে। হেপাটাইটিস এ এবং নোরোভাইরাস সংক্রমণ অনুপযুক্ত খাদ্য পরিচালনার মাধ্যমেও হয়ে থাকে।
(২)ভিবিন্ন ব্যাক্টব্যাক্টেরিয়া, যেমনঃ সিগেলা ,ব্যাসিলাস ,ইসচেরিশিয়া কোলাই ,ভিব্রিও। দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে ই কোলাইয়ের মত প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবীর সংস্পর্শে আসার ফলে ডায়রিয়া হয়। দূষিত পানি ছাড়াও ই কোলাই কাঁচা বা কম রান্না করা গরুর মাংস, কাঁচা শাকসবজি এবং পাস্তুরিত দুধে থাকে।
(৩)ছত্রাক গঠিত ডায়রিয়া ,
(৪)কৃমির কারণে ডায়রিয়া ,
(৫)প্রোটোজোয়ার কারণে ডায়রিয়া ,
(৬)সংক্রমিত বা অ-সংক্রমিত ডায়রিয়া ,
কিছু অ্যান্টিবায়োটিক আছে যেগুলো দেহের খারাপ ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলার পাশাপাশি ভালো ব্যাকটেরিয়াও মেরে ফেলে। ফলে অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার স্বাভাবিক ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটে, যা পুরো শারীরিক অবস্থাকে ডায়রিয়ার দিকে ধাবিত করে। এছাড়াও অ্যান্টি-ক্যান্সার ওষুধ এবং ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত অ্যান্টাসিড ডায়রিয়া সৃষ্টির জন্য দায়ী।
ডায়রিয়ার লক্ষণ সমূহ (Symptoms of diarrhea)
- ডায়রিয়ার প্রধান উপসর্গগুলো হল মলত্যাগের জন্য প্রচন্ড চাপ অনুভূত হওয়া, এবং ঘন ঘন পাতলা পায়খানা। এছাড়াও বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা, পেটে চাপ অনুভূত হওয়া, পেট ফোলা থেকে শুরু করে চূড়ান্ত অবস্থায় ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা হয়।
- ডায়রিয়ার গুরুতর জটিলতা হল পানিশূন্যতা। ডায়রিয়ার কারণে শরীর থেকে প্রয়োজনী তরলের একটি বিশাল অংশ বেরিয়ে যায়। আর এর ফলেই পানিশূন্যতার ঝুঁকি বাড়ে। পানিশূন্যতার লক্ষণগুলো হলো প্রচন্ড ক্লান্তি, শুকনো শ্লেষ্মা, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, মাথাব্যথা, তৃষ্ণা বৃদ্ধি, প্রস্রাব হ্রাস এবং শুষ্ক মুখ।
- বাচ্চারা ডায়রিয়া এবং পানিশূন্যতার ক্ষেত্রে বেশ সংবেদনশীল। এ সময় বাচ্চাদের প্রস্রাব কমে যায়, মুখ শুকিয়ে যায়, মাথাব্যথা হয়, ক্লান্ত দেখায়, কান্নার সময় চোখে পানি থাকে না, চোখ আধবোজা- আধখোলা অবস্থায় থাকে, তন্দ্রাতুর দেখায় এবং সবসময় বিরক্ত থাকে।
ডায়রিয়ার চিকিৎসা (treatment)
সাধারণত ডায়রিয়া হলে এটা নিজে নিজেই সেরেযায়। রোগ যতদিন হয় ততদিন রোগীকে খাওয়ার সেলাইন খাওয়াতে হবে। সেলাইন শরীরের পানিস্বল্পতা রোধ করে।
কলেরা জীবাণু দ্বারা ডায়রিয়া হলে প্রতিদিন শরীর থেকে ২০/৩০ লিটার পানি বের হয়ে যায়। যা শরীরের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। তাই যতদিন পাতলা পায়খানা থাকে ততদিন রোগীকে খাওয়ার সেলাইন খাওয়াতে হবে।
উদরাময় দীর্ঘ সময়ের জন্য হলে ডাক্তারের পরামর্শ করে অ্যান্টিবায়োটিক নেয়া যেতে পারে। এ সময় ডাক্তার শরীরের যাবতীয় অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে এবং রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাচাই করে সঠিক অ্যান্টিবায়োটিকের পরামর্শ দিবেন। |
- ও আর স – যতবার পাতলা পায়খানা হবে ততবার খেতে হবে।
- সিপ্রোফক্সাসিন ৫০০ এম এল। দিনে ২ বার ৭ দিন।
- মেট্রোনিডাজল ৪০০ এম এল। দিনে ৩ বার ৭ দিন।
- প্যান্টোপ্রাজল ২০ এম এল। দিনে ২ বার ৭ দিন।