সায়াটিকা একটি সায়াটিক স্নায়ু জনিত রোগ। একক স্নায়ু হিসাবে সায়াটিক শরীরের সবচেয়ে বড় স্নায়ু। কশেরুকার ভেতর দিয়া যে স্নায়ুরজ্জু বা স্পাইনাল কার্ড যায়,সেটি মেরুদন্ডের একেবারে শেষ প্রান্তে (লাম্বার ৩,৪,৫ ও সেকরাল ১ ভার্টিব্রা) উরুর পেছনদিক দিয়ে হাঁটুর নিচের মাংসপেশির মধ্য দিয়ে পায়ের আঙুল পর্যন্ত বৃস্তিত। যখন কোন কারনে ক্ষতিগ্রস্থ হয় বা চাপ লাগে বা ইরিটেটেড হয়, তখন সায়াটিকা হয়।
কারণ
সাধারণত সায়াটিকার মূল কারণ ৬ টি। সেগুলো হলো —
- লাম্বার হার্নিয়েটেড ডিস্ক বা স্লিপ ডিস্ক বা রাপচার্ড ডিস্ক বা বালজিং ডিস্ক ইত্যাদি, যা লাম্বার ৩,৪,৫,এই কশেরুকায় হয়।
- ডিজেনারেটিভ ডিস্ক ডিজিজ,যা সাধারণত বয়সের কারনে হয়।
- ইজমিক স্পন্ডাইলোলিসথেসিন। একই সঙ্গে গঠন ডিস্ক ক্ষয়,ভার্টিব্রাটা ফ্রাকচার ও ভার্টিব্রা স্থানচ্যুত হয়।
- লাম্বার স্পাইনাল স্টেনসিস। সাধারণত স্পাইনাল ক্যানালের গাত্রের হাড় বেড়ে গিয়ে নালী সরু হয়ে যায় এবং এ কারণে স্নায়ুর উপরে চাপ পরে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লাম্বার স্পাইনাল স্টেনসিস বেশি হতে থাকে।
- পিরিফর্মিস সিনড্রোম। সাধারণত উরুর পিরিফর্ম মাংসপেশির কারনে সায়াটিক স্নায়ুর উপর চাপ পড়ে বা ইরিটেশন তৈরি হয়ে এ অবস্থা হয়।
- সেক্রোএলিয়াক জয়েন্ট ডিসফাংশন। অস্থিসন্ধির কার্য্ক্রম বেহত হয় বলে স্নায়ু বা নার্ভের উপর চাপ পরে।
এ ছাড়া আরও কিছু কারণে সায়াটিকার মতো লক্ষণ দেখা যায়। যেমনঃ গর্ভধারণ,এপিডুরাল ফাইব্রোসিস বা স্কার টিস্যু,মাসল স্ট্রেইন,স্পাইনাল কার্ডের টিউমার,ইনফেক্শন, ভার্টিব্রাতে ফ্রাকচার বা ফাটল।
লক্ষণ ও উপসর্গ (Signs and symptoms)
যদিও কোমরের উভয় পাশে এবং দুই পায়ের সায়াটিকা হতে পারে,তবে এক পাশে ও এক পায়েই বেশী হতে দেখাযায়। লক্ষণ গুলোর মধ্যে আছে –
- কোমরে ব্যথা সাধারণত নিচের দিকে এবং এক পাশে।
- ব্যথা কোমর থেকে পায়ের দিকে ছড়িয়ে যায়। উরুর দিকে বেশি অনুভব হয়।
- অনেক ক্ষত্রে কোমরে কোন ব্যথা থাকে না , কিন্তু উরুর পেছন দিক থেকে শুরু করে হাঁটুর নিচের মাংসপেশির মধ্যে বেশি ব্যথা করে।
- ব্যথা সাধারণত তীব্র ধরনের হয়। সুই ফুটানোর মতো ব্যথা হয়।
- শুয়ে থাকলে ব্যথা কম থাকে। কিছক্ষন হাঁটলেও আর হাঁটা যায় না। কিন্তু বসে থাকলে বা দাঁড়িয়ে থাকে ব্যথা বাড়ে।
- অনেক সময় কিছুক্ষন হাঁটলে আর হাঁটা যায়না। তখন কিছুটা বিশ্রাম নিলে আবার কিছুসময় হাত যায়।
- আক্রান্ত পায়ে ঝিম ঝিম বা অবশ ভাব হয় ও দুর্বলতা অনুভব হয়।
- হাঁচি বা কাশি দিলে ব্যথা বেড়ে যায়।
চিকিৎসা
প্রথম অবস্থায় রোগী দুই সপ্তাহ পূর্ন বিশ্রাম এবং সেই সঙ্গে কিছু নিদৃষ্ঠ ঔষধ সেবন করলে ব্যথা সেরে যায়। আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপারেশন করে বের হয়ে আসা ডিস্ক অপসারণ করতে হয় বা সরু হয়ে যাওয়া স্পাইনাল ক্যানাল ঠিক করা হয়।
অপারেশন ছাড়া চিকিৎসার মধ্যে আছে ঠান্ডা বা গরম সেঁক নেওয়া। সাধারণত প্রতি দুই ঘন্টা পর পর ২০ মিনিট ঠান্ডা বা গরম, কিছু ক্ষেত্রে একবার ঠান্ডা,একবার গরম এভাবে প্রয়োগ করতে হয়।
ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আইবুপ্রোফেন,ন্যাপ্রোক্সেন,স্টেরয়েড দুই সপ্তাহ পর্যন্ত দেয়া যায়। যেসব কারনে অপারেশন করতে হয় সেগুলো হচ্ছে –
- তিন মাস ঔষধ সেবন ও বাড়িতে বসে চিকিৎসা নেওয়ার পরও ব্যথা না কমলে।
- ব্যথা এত বেশি তীব্র হয় যে রোগী শুয়ে থাকলেও ব্যথা হচ্ছে এমন হলে।
- যদি রোগীর অজান্তেই মল-মূত্র বের হয়ে আসে।
- যদি পা অবশ হয়ে যায় অথবা পায়ের বোধ শক্তি কমে যায় বা বোধ শক্তি একেবারে চলে যায়।